আন্তর্জাতিক
সাম্রাজ্যবাদের বিষবাষ্প ও ফিরে দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

মানব সভ্যতার অগ্ৰযাত্রা কখনোই বাঁধা মুক্ত, অবিরাম চলমান কিংবা চির মসৃণ ছিল না। সভ্যতার বিকাশে কতগুলো নিয়ামক শক্তি বিদ্যমান যেগুলো সভ্যতার গতি প্রাবাহকে টেনে ধরেছে প্রতিনিয়ত, থামিয়ে দিতে চেয়েছে এর বিকাশ ও উন্মেষকে । প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নিয়ামকসমূহের মধ্যে যেমন রয়েছে কিছু প্রাকৃতিক কার্যকারণ , তেমনই রয়েছে কিছু মানবসৃষ্ট প্রভাবক যা সভ্যতার বিনির্মাণের পথে ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করেছে। মানবসৃষ্ট যেসকল প্রভাবক সভ্যতার অগ্ৰযাত্রাকে বারবার রুদ্ধ করেছে,তাদের মধ্যে যুদ্ধ অন্যতম অনুঘটক। মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে যেসকল যুদ্ধ ইতিহাসের পট পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভয়াবহ ও আলোচিত যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। এই যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদের চেতনা লালনকারী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী অক্ষ শক্তির প্রতিনিধি জার্মান, জাপান ও ইতালির মতো দেশগুলোর সাথে তথাকথিত উদার গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী মিত্র শক্তির প্রতিনিধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর মধ্যে সংঘটিত মানব ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ও দুঃখজনক ঘটনা। জার্মানির চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও জার্মান শ্রেষ্ঠত্ববাদ তত্ত্বের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়। ক্ষমতা লাভের পরপরই তিনি জার্মানিকে অস্ট্রিয়ার সাথে সংযুক্ত করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। ১৯৩৬ সালের দিকে জাপান ও জার্মানির মধ্যে কমিনটার্ন বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ১৯৩৭ সালে মুসোলিনির নেতৃত্বে ইতালি ওই চুক্তিতে যোগদান করলে দেশ তিনটির মধ্যে বার্লিন-রোম- টোকিও অক্ষচুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিটি ছিল ফ্রান্স, ব্রিটেন ও রাশিয়া বিরোধী চুক্তি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত হিটলার জার্মানিকে অস্ত্রে সুসজ্জিত করেন এবং ইউরোপের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী নাৎসি বাহিনী গঠন করেন। চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার চেকোস্লাভাকিয়ার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার ফলশ্রুতিতে চেকোস্লাভাকিয়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় এবং লিথুয়ানিয়ার কাছ থেকে মোমেল বন্দর জোরপূর্বক দখল করে নেন। পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করে ডানজিগ বন্দর দখল করে নেন এবং এরফলেই আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অস্বাভাবিক পরিসমাপ্তি ও পরাজিত পক্ষের উপর চাপিয়ে দেয়া বৈষম্যমূলক বিভিন্ন চুক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী উপনিবেশিক শক্তির বিষবাস্প ও সম্রাজ্যবাদী শক্তির যুদ্ধংদেহী মনোভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য সহায়ক পরিবেশে সৃষ্টি করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজিত শক্তির অন্যতম প্রতিনিধি জার্মানির জন্য চাপিয়ে দেয়া ভার্সাই চুক্তি ছিল চরম অপমানজনক। এই চুক্তির ফলে জার্মান সাম্রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়ে। সাম্রাজ্যের অন্তর্গত দেশসমূহ হাতছাড়া হয়ে যায়। রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে জার্মানির ব্যপক ক্ষতি সাধিত হয় যা দেশটির মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহার সঞ্চার ঘটে এবং পরবর্তী যুদ্ধ ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চলমান ঘটনাবহুল এই মহাযুদ্ধ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রানহানি ঘটিয়ে ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনিবার্য প্রতিফল। প্রথম মহাযুদ্ধের মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গোটা বিশ্বে গণতন্ত্র, শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যপক অবনমন ঘটে। ভার্সাই চুক্তি গণতন্ত্রের পরিবেশকে দুর্বল করে দেয় এবং সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে গণতন্ত্র, শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের আন্দোলন ত্বরান্বিত হয় যা আরেকটি যুদ্ধের পথকে প্রশমিত করে। গ্ৰেট ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর মনোভাব জার্মানিকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে। জাপান ও ইতালির মতো পরাশক্তিগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাদের জন্য বিশ্বব্যপী প্রাধান্য বিস্তার করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিপত্তি অর্জন করা একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত হয়। এরফলে জাপান, জার্মানি ও ইতালির মাঝে মৈত্রী তৈরি হয় এবং যুদ্ধের উন্মাদনায় মেতে উঠে।এসময় সারাবিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশে দেশে নৈরাজ্যবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। অথচ এই নিরাজ্যবাদ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে মোকাবেলা করতে লীগ অব নেশন ও ব্রিটেন- ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দেশগুলো সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। সাম্রাজ্যবাদী জাপান কর্তৃক ১৯৩১ সালে মানচুরিয়া দখল, ১৯৩৭ সালে ফ্যাসিবাদী ইতালি কতৃক ইথিওপিয়া দখল ও স্পেনের গৃহবিবাদ তৎকালীন পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তোলে।১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে দেশটিতে উগ্ৰজাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে যার বিষবাষ্প পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তোলে। ইতালির মুসোলিনি ও জার্মানির হিটলারের স্বৈরাচারী মনোভাব বা সর্বাত্মকবাদ (Totalitarianism) গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করে সামরিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কামনায় সম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হয় যার ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বস্তুত ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি এবং এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ক্ষতির চেয়ে পরোক্ষ ক্ষতির পরিমাণ ছিল আরো ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। বিশ্ববাসী এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পত্যক্ষ করেছিল পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা যার প্রভাব এখনো জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিদ্যমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপীয় সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবের কারণে সমাজতন্ত্র বিকাশ লাভ করে এবং পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পূঁজিবাদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। জার্মানি পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়। পশ্চিম জার্মানিতে ও পূর্ব জার্মানিতে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়। গোটা বিশ্ব ব্যবস্থা পূঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র- এই দুই প্রধান ব্লকে বিভক্ত হয়ে পড়ে যা তৎকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা করে। ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদী রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অর্জন যা আদ্যবধি টিকে আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা মানব ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের অনেক দেশের হাতেই আনুবিক অস্রের মজুদ রয়েছে এবং অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিশ্বব্যপী অস্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্র পরিসরে যুদ্ধ চলমান থাকলেও তা কখনোই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ লাভ করেনি। জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিভিন্ন যুদ্ধবিরোধী সংগঠন বৃহৎ পরিসরে যুদ্ধ এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে পৃথিবীকে যুদ্ধের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব জাগ্ৰত হওয়া আশু প্রয়োজন। রাজনৈতিক মহলে শুভবুদ্ধির উদয় হলেই মানব সভ্যতা যুদ্ধের অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবী হয়ে উঠবে সবার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
লেখক- আকতারুল ইসলাম
তথ্যসূত্র- তারেক শামসুর রেহমান, বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর,ঢাকা,২০১৯.

তখন মেয়েটির বয়স সবে সাত বছর। মায়ের সঙ্গে সে হাঁটতে বের হয়। তবে কিছুতেই মায়ের হাত ধরবে না। নিজের খেয়াল মতো রাস্তা পার হতে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সে। ছোট্ট শরীরটাকে ধাক্কা মারার পর ঠেলতে ঠেলতে ১০০ ফুট দূরে নিয়ে গিয়েছিলো একটি গাড়ি। ২০১৬ সালে ঘটানাটি ঘটে। পথচলতি লোকেরা চিৎকার করে ওঠে। মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে ছুটে যায় মেয়েটির মা। তিনি ও বাকি সবাই নিশ্চিত ছিলেন যে, মেয়েটি আর বেঁচে নেই। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে ফিরে আসে। তার মুখে একটুও ভয় বা আতঙ্ক নেই। মেয়ের হাসিমুখের অভিব্যক্তি দেখে তার মায়ের মনে হচ্ছিল সে বলতে চাইছিলো,‘কী হয়েছে এত চিন্তার কী আছে?’
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তার শরীরে কয়েকটি আঁচড়ের দাগ ছাড়া আর কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুরো শরীর স্ক্যান করেও ভেতরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ডাক্তাররা নিশ্চিত হলেন কোনো অবস্থাতেই মেয়েটি যন্ত্রণা অনুভব করে না। শুধু ব্যথা নয় খিদে এমনকি ঘুমও আসে না তার। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, সত্যিই এমন এক মেয়ে আছে এই বিশ্বে। তার নাম অলিভিয়
২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের কাছে হাডারফিল্ড নামের শহরের ফার্নসওয়ার্থ নামক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গৃহকর্তা রিড, তার স্ত্রী নিকি ও তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে গড়া সাধারণ মধ্যবিত্ত এক ব্রিটিশ পরিবার। পৃথিবীর অধিকাংশ চিকিৎসক আজ এই পরিবারটিকে চেনেন। এর কারণ হলো তাদের দ্বিতীয় মেয়ে অলিভিয়া।
১০ বছর বয়সী অলিভিয়া পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। অলিভিয়ার এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে যা পৃথিবীতে আর কারও নেই। যা ওই অতি ক্ষুদ্র মেয়েটিকে করে তুলেছে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন। ছোট্ট অলিভিয়া দিনের পর দিন না খেয়ে, না ঘুমিয়ে থাকতে পারে এবং যত বড় আঘাতই পাক না কেন অলিভিয়ার যন্ত্রণা লাগে না। ১০ বছরের জীবনে একদিনও কাঁদেনি অলিভিয়া।
ফার্নসওয়ার্থ পরিবারে দ্বিতীয় কন্যা ফুটফুটে অলিভিয়া। কয়েক মাসের মধ্যে বাবা-মা তাদের মেয়ের অলিভিয়ার কাণ্ড দেখে আতঙ্কিত হলেন। ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে বলেন, তাদের মেয়ে অলিভিয়া খিদে পেলে কাঁদে না, দিনে রাতে একদম ঘুমায় না, কোনো ধরনের আঘাত পেলেও কাঁদে না। ডাক্তার হেসে দম্পতিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এটা স্বাভাবিক। আপনারা বেশি খাইয়ে দিচ্ছেন তাই ক্ষুধায় কাঁদছে না। আর ঘুমটা নিয়ে সব বাবা-মা’র চিন্তা, ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। কিছুদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
ধীরে ধীরে বড় হয়েছে অলিভিয়া, মা-বাবা খিদের জ্বালায় মেয়ে কাঁদে না দেখে বাবা-মা তাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। অনেক চেষ্টার পরও অলিভিয়া যদিও সামান্য কিছু খেতো, কিন্তু কখনো ঘুমোতে চাইতো না। সারাক্ষণ তাকে নিয়ে খেলতে হতো। পরিবারের সবাই যখন ঘুমে মগ্ন থাকে অলিভিয়া তখন ছোট্ট পায় টলতে টলতে সারা বাড়ি জুড়ে সারা রাত ধরে ঘোরাঘুরি করতো। বাধ্য হয়ে বাবা-মা রাতে শিশু অলিভিয়াকে একটি খালি ঘরে খেলনা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতেন। তাদেরও তো ঘুমোতে হবে, না ঘুমিয়ে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন।
ডাক্তার বললেন, এক জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার হয়েছে অলিভিয়া। তবে এক বছরের মধ্যেও অলিভিয়ার এই সব অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই অন্য এক ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। সব শুনে সেই ডাক্তার অলিভিয়াকে পাঠিয়েছিলেন একটি ল্যাবরেটরিতে। সেখানে অলিভিয়ার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। রিপোর্টটি দেখে ডাক্তারের মুখ বিমর্ষ হয়ে যায়। সে বিভিন্ন জায়গায় অনেক ফোন করেন। এরপর ডাক্তার রিপোর্টটি পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।
কয়েকদিন পর অলিভিয়ার বাবা-মাকে ডাক্তার বলেন, আসলে অলিভিয়া ক্রোমোজোম সিক্স পি ডিলেশন নামক একটি জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার। তাই অলিভিয়ার ক্ষুধা ও ঘুম পায় না। অলিভিয়ার বাবা-মাকে ডাক্তার বলেছিলেন, এ রোগের কোনো ওষুধ নেই। অলিভিয়াকে বাঁচাতে গেলে তাকে সময়ে সময়ে খাইয়ে দিতে হবে, কিন্তু ঘুমের জন্য কিছু করতে পারবো না। কারণ এইটুকু মেয়েকে ঘুমের ওষুধ দেয়া যাবে না। যেহেতু না ঘুমিয়েও সে সুস্থ আছে তাহলে সেভাবেই তাকে থাকতে দিন। কী এই ক্রোমোজোম সিক্স পি ডিলেশন? মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ভ্রুণের কোষগুলো বারবার বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে, ফলে গর্ভস্থ সন্তানের দেহে কোষের সংখ্যা দ্রুত ও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অলিভিয়া যখন মায়ের পেটে বেড়ে উঠছিলো, তার কোষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছিলো।
তবে বিভাজনের ত্রুটির জন্য অলিভিয়ার দেহের কোষগুলোতে সিক্স পি নামক ক্রোমোজোম উপাদানটি ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই ভূমিষ্ঠ হয় অলিভিয়া। তবে কোষের ত্রুটি স্থায়ীভাবেই থেকে গিয়েছিলো অলিভিয়ার দেহে। অলিভিয়ার দেহ থেকে সিক্স পি নামক ক্রোমোজোম মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অলিভিয়ার খিদে, ঘুম এবং ব্যথা পাওয়ার অনুভুতিও তার জীবন থেকে মুছে যায়।
অপমান করলে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয় অলিভিয়া। ডাক্তারের কথা মতো, অলিভিয়ার বাবা-মা মেয়েকে বড় করতে থাকেন। তারপর অলিভিয়া স্কুলে ভর্তি হয়। দিন-রাত জেগে থেকেও স্কুলের মেধাবী ছাত্রী সে। পরীক্ষায় অলিভিয়ার নাম্বার সবচেয়ে বেশি থাকে। খেলাধুলাতেও সে স্কুলে পিছিয়ে থাকে না। তবে শান্ত ও হাসিখুশি অলিভিয়ার একটাই দোষ, কেউ তাকে অপমান করলে সে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তখন অলিভিয়া আক্রোশবশত কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করে সেই মানুষটিকে বা নিজের মাথা দেওয়ালে ঠোঁকে।
সাইকোলজিস্ট, সাইক্রিয়াটিস্ট কিছুই বাদ দেননি অলিভিয়ার বাবা-মা। কিন্তু তারা বলেছিলেন,তাদের কিছু করার নেই। এসব হচ্ছে অলিভিয়ার ক্রোমোজোমের গঠনগত সমস্যার উপসর্গ। ওষুধ দেয়া যাবে না কারণ অলিভিয়া ওইটুকু সময় বাদ ছাড়া বাকি সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ও হাসিখুশি থাকে। ধরা পড়েছিল অলিভিয়ার আরেক অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য রোজ বিকেলে বাড়ির সামনের পার্কে তার ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলা করতে যেতো অলিভিয়া। একদিন অলিভিয়া একা গিয়েছিলো পার্কে।
সেখান থেকে ফেরার পর অলিভিয়াকে দেখে আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন মা নিকি। অলিভিয়ার নিচের ঠোঁটের অর্ধেকটা কেটে ঝুলছিল। জামা রক্তে ভেজা, কিন্তু অলিভিয়ার মুখে হাসি। আতঙ্কিত মায়ের পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকে জুতো খুলতে শুরু করেছিলো অলিভিয়া। মুখে একটুও ব্যথার অভিব্যক্তি ছিল না তার।
হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল অলিভিয়াকে, প্রথমে স্টিচ ও পরে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। পুরো সময়টিতে একটু কাঁদেনি অলিভিয়া। হাসিমুখে ইনজেকশনের পর ইনজেকশন নিয়েছিলো। ডাক্তাররা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ‘ইস্পাত’ কঠিন মানসিকতার মেয়েটিকে দেখে। তারপরে অসংখ্য বার আঘাত পেয়েছে অলিভিয়া। কিন্তু তার মুখ থেকে একবার ‘আহ” শব্দটিও বের হয়নি।
অলিভিয়া পৃথিবীর একমাত্র ‘সুপার হিউম্যান’ এই দুর্ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তারদের সঙ্গে অলিভিয়ার ডাক্তারদের ফোন এবং ই-মেল চালাচালি এবং পৃথিবীব্যাপী সার্ভে রিপোর্টের আদানপ্রদান শুরু হয়েছিলো। কিছুদিন পরে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অলিভিয়াকে পৃথিবীর প্রথম ‘বায়োনিক চাইল্ড’ ঘোষণা করেছিলেন। এর অর্থ হলো অলিভিয়া অস্বাভাবিক ক্ষমতাযুক্ত একটি শরীর ও মন নিয়ে জন্মেছে, এই পৃথিবীতে অলিভিয়ার মতো সহ্যশক্তি আর কারো নেই।
অলিভিয়া কয়েকমাস না ঘুমিয়ে, কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে, আর তার শরীর যেকোনো আঘাত ও যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে ঠিক রোবটের মতো। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্মিলিতভাবে বিশ্বে আর কোনো মানুষের দেহে কখনো দেখা যায়নি। সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে আজ অবধি ১০০ জনকে পাওয়া গেছে যাদের সিক্স পি নামক ক্রোমোজোম ব্যাধিগ্রস্ত আছে। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে অলিভিয়াই প্রথম মানুষ যার শরীরে কোন ব্যথা, ঘুম,ক্ষুধা নেই এই তিনটি উপসর্গই আছে। ভাবলেই অবাক লাগে শারীরিক ত্রুটি আজ লৌহমানবী অলিভিয়াকে বিশ্ব বিখ্যাত করে তুলেছে। করে তুলেছে বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম সুপার হিউম্যান।
~সংগৃহীত
খেলাধুলা
কি কি থাকছে ফিফার নতুন নিয়মে?

বদলে যাচ্ছে ফুটবলের নিয়ম। খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে ৯০ মিনিটের পরিবর্তে খেলা হবে ৬০ মিনিট। থাকবে ইচ্ছেমতো ফুটবলার পরিবর্তনের সুযোগ। হলুদ কার্ড দেখলে সাসপেন্ড হবেন খেলোয়াড়রা, সাইডলাইনে বসে থাকতে হবে ৫ মিনিট। এমন বেশকিছু নতুন নিয়ম অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টুর্নামেন্ট ফিউচার অব ফুটবল কাপে পরীক্ষামূলকভাবে প্রবর্তন করেছে ফিফা। এখনো কিছু চূড়ান্ত না হলেও এরই মধ্যে ভক্তদের মধ্যে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুতেই এসেছে পরিবর্তন। খেলাধুলাও এর বাইরে নয়। দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত কত কিছুই না করছে খেলার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।
টি-২০ ফরম্যাট বিশ্ব ক্রিকেটে যোগ করে নতুন মাত্রা। এবার ফুটবলও সে পথে হাঁটছে। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ফুটবলে নতুন কিছু সংযোজনের ক্ষমতা আছে শুধু তাদেরই। ফুটবলকে আরও আকর্ষণীয় করতে বেশকিছু নিয়মে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে তারা।
ইউরোপের চারটি ক্লাব পিএসভি, আজেড আল্কমার, লাইপজিগ ও ক্লাব ব্রুজের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একটি টুর্নামেন্ট চলছে। ফিউচার অব ফুটবল কাপ নামে সেই টুর্নামেন্টে কিছু নিয়মে পরীক্ষামূলকভাবে পরিবর্তন এনেছে ফিফা। এমন খবর দিয়েছে ইউরোপের বেশকিছু সংবাদমাধ্যম। যদিও ফিফার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে খবর প্রচারের পর তা নিয়ে কোনো আপত্তিও জানায়নি ফিফা।
নতুন সেই নিয়মগুলো কি? সবার আগে খবরটি প্রচার করে খেলাধুলাবিষয়ক স্পেনের শীর্ষ পত্রিকা মুন্ডো দেপোর্তিভো। তারা বলছে, প্রস্তাবিত নিয়মে ৯০ মিনিটের পরিবর্তে খেলা হবে ৬০ মিনিট। প্রতি অর্ধে খেলা হবে ৩০ মিনিট। থ্রো ইন হবে পা দিয়ে। কোনো ফুটবলার হলুদ কার্ড দেখলে সাসপেন্ড হবেন ৫ মিনিটের জন্য, বসে থাকতে হবে সাইডলাইনে। ম্যাচ চলাকালীন ফুটবলার পরিবর্তনে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আর বল মাঠের বাইরে গেলে বা খেলা বাধাগ্রস্ত হলে বন্ধ থাকবে ঘড়ি।
নতুন এ নিয়মগুলো এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দর্শক-সমর্থকের মাঝে। তাদের অধিকাংশই এই নিয়মগুলোর সমালোচনা করে বলছেন, এখন যে নিয়মে খেলা চলছে সেটাই আদর্শ।
আন্তর্জাতিক
অবশেষে বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুললেন : বিল গেটস
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদের তকমা পাওয়া এই বিচ্ছেদের জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা

অবশেষে বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুলেছেন বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটস। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদের তকমা পাওয়া এই বিচ্ছেদের জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা।
গত সপ্তাহে শীর্ষ ধনীদের নিয়ে আয়োজিত এক গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে এ নিয়ে তিনি কথা বলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলার সময় বিল গেটস রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন বলে ওই ক্যাম্পে অংশ নেওয়া একজন দাবি করেছেন। এমনকি এ নিয়ে কথা বলার সময় গলা ধরে আসে তার।
ক্যাম্পে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি নিউ ইয়র্ক পোস্টকে জানিয়েছেন যে, বিল গেটস বিচ্ছেদের জন্য নিজেকেই দায়ী করেন। তিনি এটা (বিচ্ছেদ) নিয়ে কথা বলার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এমনকি তার গলাও ধরে আসে।
ওই ক্যাম্পে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ প্রশ্নত্তোর পর্বে সিএনবিসি হোস্ট বেকি কুইক বিল গেটসকে বিচ্ছেদের পর গেটস ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন করলে এসব কথা বলেন তিনি।
চলতি বছরের ৪ মে ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দেন এই দম্পতি।
বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। এরপর দুজনের মধ্যে জানাশোনা শুরু হয়।
এরপরের গল্প দুজনের সামনে এগিয়ে যাওয়া। শুরু হয় দুজনের চুটিয়ে প্রেম। নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রে বিল গেটস বলেছেন, আমরা একে অপরের খুব খেয়াল রাখতাম। এখানে দুটি সম্ভাবনা ছিল। হয় আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ হবে, নয়তো আমাদের বিয়ে করতে হবে।
মেলিন্ডা বলেন, তিনি বিল গেটসকে একজন সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তাকে বিয়ে করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও দিয়েছিলেন বিল—এমনটাই জানিয়েছিলেন মেলিন্ডা।
এরপর প্রেম আরও গভীর হয়েছে। প্রেম শুরুর সাত বছর পর ১৯৯৪ সালে তারা এক ছাদের নিচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
-
বিনোদন2 years ago
৫০ হাজার সিনেমা ডাউনলোড হবে মাত্র এক সেকেন্ডেই!
-
ইতিহাস2 years ago
রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা
-
আন্তর্জাতিক2 years ago
বিশ্বজুড়ে বিয়ের যত আজব অদ্ভুত রীতিনীতি
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি2 years ago
মোবাইল ফোন আসল না নকল বুঝবেন যেভাবে
-
খেলাধুলা2 years ago
প্রথম জয়ের স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা
-
জাতীয়2 years ago
‘পরীক্ষা এক বছর না দিলে শিক্ষার্থীদের জীবনে এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না’
-
আন্তর্জাতিক2 years ago
দ্য চেঞ্জ মেকার : এরদোয়ান
-
সর্বশেষ2 years ago
আনারসের পাতা থেকে তৈরী হচ্ছে ড্রোন