ইতিহাস
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মুসলিম শাসক: মানসা মুসা

আপনাদের যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ধণী ব্যাক্তি কে তাহলে সকলেই উত্তরে বলবেন জেফ বেজোস, বিল গেটস বা এলন মাক্সের নাম। কিন্তু এমন একজন ধনী ব্যাক্তি ছিলেন যার কাছে এরা কিছুই না। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানব বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যাক্তি এবং মুসলিম শাসক মানসা মুসা সম্পর্কে।
কিছুদিন আগে ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে বিলিয়নিয়ারের তালিকা।সেই তালিকায় সেরা ধনী হয়েছেন আমাজোনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। ১৩১ বিলিয়ন বা (১৩ হাজার ১০০ কোটি) ডলার সম্পদের মালিক জেফ বোজোস বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
তবে সর্বকালের সেরা ধনী মানসা মুসার সম্পদের কাছাকাছিও তিনি নেই।
১৪ শতকে পশ্চিম আফ্রিকার এই মুসলিম শাসক এতটাই ধনী ছিলেন যে তার দানশীলতার কারণে একটি পুরো দেশের অর্থনীতিতে পর্যন্ত ধস নেমেছিল।
“মুসার সম্পদের যে শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে আসলে তিনি যে কতটা সম্পদশালী এবং ক্ষমতাশালী ছিলেন তা ধারণা করাও কঠিন,”-, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুডলফ বুচ ওয়ার বলেন
“কারো পক্ষে যতটা বর্ণনা করা সম্ভব তার চেয়েও ধনী ছিলেন মানসা মুসা,”-
২০১২ সালে একটি মার্কিন ওয়েবসাইট, সেলিব্রিটি নেট ওর্থ তাঁর মোট সম্পদের মূল্য ৪০ হাজার কোটি ডলার বলে একটি ধারণা দেয়। তবে অর্থনীতির ইতিহাসবিদরা একমত যে সংখ্যা দিয়ে তাঁর সম্পদের কোন সঠিক ধারণা দেয়া অসম্ভব।
১২৮০ সালে একটি শাসক পরিবারেই জন্ম মানসা মুসার। তিনি ক্ষমতায় আসার আগে মালি সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন তাঁর ভাই মানসা আবু-বকর। ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে আবু-বকর সিংহাসন ত্যাগ করে একটি অভিযানে বের হন।
চতুর্দশ শতকের সিরীয় ইতিহাসবিদ শিহাব আল-উমারির বর্ণনা অনুযায়ী, আটলান্টিক মহাসাগর এবং তার ওপারে কী আছে তা নিয়ে মারাত্মক কৌতুহলী ছিলেন আবু-বকর। বলা হয় ২ হাজার জাহাজ এবং হাজার-হাজার পুরুষ, নারী এবং দাস-দাসী নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি জমান তিনি, এবং এরপর আর কখনো ফিরে আসেননি।
উত্তরাধিকার সূত্রে ভাইয়ের ফেলে যাওয়া রাজত্বের শাসনভার নেন মানসা মুসা।
তাঁর শাসনামলে মালি রাজত্বের আকার বাড়তে থাকে। তিনি তার রাজত্বে আরো ২৪ টি শহর যুক্ত করেন, যার একটি ছিল টিম্বাকটু।
তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত ছিল প্রায় ২,০০০ মাইলজুড়ে, আটলান্টিক মহাসাগর থেকে শুরু করে বর্তমান নিজার, সেনেগাল, মৌরিতানিয়া, মালি, বুর্কিনা ফাসো, গাম্বিয়া, গিনি-বিসাউ, গিনি এবং আইভোরি কোস্টের বড় অংশ ছিল তার রাজত্বে।
এই বিশাল সাম্রাজ্যের সাথে তাঁর আয়ত্ত্বে আসে মূল্যবান খনিজ সম্পদ- বিশেষ করে স্বর্ণ এবং লবণ।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের হিসেবে মানসা মুসার শাসনামলে তৎকালীন বিশ্বে যে পরিমাণ স্বর্ণের মজুত ছিল তার অর্ধেকই ছিল মালিতে।
আর তার সবটারই মালিক ছিলেন মানসা মুসা।
“শাসক হিসেবে মধ্যযুগের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটির প্রায় অফুরান যোগান ছিল মানসা মুসার,”-
“বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো তার সাম্রাজ্যে স্বর্ণ এবং অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা করতো, সেই বাণিজ্য থেকে আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠেন মানসা মুসা”।
মালি সাম্রাজ্যে স্বর্ণের বিশাল মজুত থাকলেও, এই রাজত্ব বহির্বিশ্বে অতটা পরিচিত ছিল না।
তবে ধর্মপ্রাণ মুসলিম মানসা মুসা যখন সাহারা মরুভুমি এবং মিশর পার হয়ে মক্কায় হ্জ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখনি সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করলো।
বলা হয় ৬০,০০০ মানুষের একটি দল নিয়ে মালি ত্যাগ করেন মুসা।
তার সেই দলে ছিলেন সম্পূর্ণ মন্ত্রী পরিষদ, কর্মকর্তারা, সৈনিক, কবি, ব্যবসায়ী, উটচালক এবং ১২,০০০ দাস-দাসী। একইসাথে খাবারের জন্য ছিলো ছাগল এবং ভেড়ার এক বিশাল বহর।
মরুর বুক দিয়ে যেন একটি শহর চলছিল।
যে শহরের একজন দাসের গায়েও স্বর্ণখচিত পারস্যের সিল্কের জামা পরিহিত ছিলো। শহরের সাথে চলছিল শত-শত উটের বহর, যার প্রতিটির পিঠে ছিলো শত-শত কেজি খাঁটি স্বর্ণ।
দেখার মত দৃশ্য ছিল সেটি।
সেই দেখার মত মানুষ পাওয়া গেল যখন পুরো দলটি কায়রোতে পৌঁছুল।
কায়রোতে মানসা মুসার ভ্রমণ সেখানকার বাসিন্দাদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে তাঁর ভ্রমণের ১২ বছর পর যখন আল-উমারি শহরটিতে যান, তখনো মানুষের মুখে মুখে ছিল মানসা মুসার স্তুতিবাক্য।
কায়রোতে তিন মাস অবস্থানের সময় তিনি যে হারে মানুষকে স্বর্ণ দান করেছেন তাতে পরবর্তী ১০ বছর ঐ পুরো অঞ্চলে স্বর্ণের দাম তলানিতে গিয়ে পৌঁছায়, অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্টঅ্যাসেট ডট কমের এক হিসেবে, মানসা মুসার মক্কা যাত্রার ফলে স্বর্ণের যে অবমূল্যায়ন হয় তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে তৎকালীন সময়ে ১৫০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।
ফেরার পথে আবারো মিশর পার হন মানসা মুসা। অনেকের মতে যেসময় দেশটির অর্থনীতিকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন তিনি। চড়া সুদে তিনি বেশকিছু স্বর্ণ ধার করে সেগুলো তিনি বাজার থেকে তুলে নেন। আবার অনেকে বলেন, তিনি এত বেশি খরচ করেন যে তাঁর স্বর্ণ শেষ হয়ে যায়।
লন্ডনের স্কুল অফ আফ্রিকান এবং ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের লুসি ডুরান বলেন, মালির চারণকবি, যারা কিনা গানের সুরে ইতিহাস বর্ণনা করতেন, তারা মানসা মুসার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
“তিনি মালির এত বেশি স্বর্ণ দান-খয়রাত করেন যে তারা (চারণকবিরা) তাদের গানে মানসা মুসার প্রশংসা করেন না। কারণ তারা মনে করেন, তিনি দেশটির সম্পদ বিদেশের মাটিতে নষ্ট করেছেন”।
মানসা মুসা তার তীর্থযাত্রায় যে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ খরচ অথবা নষ্ট করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তার এই অতি দানশীলতাই তাকে বিশ্বের নজরে এনে দেয়।
মানসা মুসা আক্ষরিক অর্থেই মালি এবং নিজেকে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে দেন। ১৩৭৫ সালের একটি কাতালান মানচিত্রে টিম্বাকটুর ওপরে একজন আফ্রিকান রাজাকে স্বর্ণের টুকরো হাতে বসে থাকার ছবি দেখা যায়। তিনিই মানসা মুসা।
দূর-দুরান্ত থেকে মানুষজন টিম্বাকটু দেখতে আসা শুরু করেন।
উনিশ শতকেও টিম্বাকটু ছিল কিংবদন্তীর হারিয়ে যাওয়া এক স্বর্ণের শহর। ভাগ্যান্বেষণে ইউরোপিয়রা খোঁজ করতেন এই টিম্বাকটুর। আর এর পেছনে মূল কারণটিই ছিল ৫০০ বছর আগে মানসা মুসার সেই শাসনামল।
মক্কা থেকে বেশ কয়েকজন ইসলামী চিন্তাবিদকে সাথে নিয়ে আসেন মানসা মুসা। যাদের মধ্যে ছিলেন নবী মোহাম্মদের সরাসরি বংশধর এবং একজন আন্দালুসিয়ান কবি ও স্থপতি আবু এস হক এস সাহেলি, যাকে কিনা বিখ্যাত জিংগারেবার মসজিদের নকশাকার হিসেবে ধারণা করা হয়।
মানসা মুসা সেই কবিকে পারিশ্রমিক হিসেবে ২০০ কেজি স্বর্ণ দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৮২ লক্ষ মার্কিন ডলার।
শিল্প এবং স্থাপনায় উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দেন, স্কুল, লাইব্রেরি এবং মসজিদ তৈরিতে অর্থ দান করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই টিম্বাকটু হয়ে ওঠে শিক্ষার কেন্দ্র এবং সারাবিশ্ব থেকে মানুষজন সেখানে পড়তে আসা শুরু করে, যা পরবর্তীতে পরিচিত হয় সাংকোর বিশ্ববিদ্যালয় নামে।
ধনী সেই রাজাকে পশ্চিম আফ্রিকায় শিক্ষার প্রসারের অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদিও সেই সাম্রাজ্যের বাইরে তার সেই গল্প খুব কম মানুষই জানতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, “ইতিহাস লেখে বিজয়ীরা”।
১৩৩৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে মানসা মুসার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা আর সেই সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেনি। ছোট রাজ্যগুলো একে একে বেরিয়ে যেতে থাকে এবং একসময় পুরো সাম্রাজ্য ধসে পড়ে।
পরবর্তীতে ইউরোপিয়দের আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন ছিল প্রতাপশালী সম্রাট মানসা মুসার কফিনের শেষ পেরেক।
“মধ্যযুগের ইতিহাসকে এখনো অনেকটা পশ্চিমা ইতিহাস হিসেবেই দেখা হয়,”- মানসা মুসার কাহিনী কেন এতটা প্রচারিত নয় তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন ব্লক মিউজিয়ামের পরিচালক লিসা করিন গ্রাজিও।
“কয়েক’শ বছর পরে না এসে, মানসা মুসার সময়ে মালি যখন সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তিতে সবার শীর্ষে ছিল, তখন যদি ইউরোপিয়রা আফ্রিকায় আসতো- তাহলে হয়তো পুরো বিষয়টা অন্যরকম হতো,”।
ইতিহাস
কে ছিলেন আম্রপালী?

বর্তমানে আম্রপালী আম আমাদের সবার প্রিয়। কিন্তু ইতিহাসেও একজন আম্রপালি ছিলেন। চলুন আজ ইতিহাসের আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক :
আম্রপালী ছিলেন এমন একজন অনিন্দ্য সুন্দরী ; প্রায় ২,৫০০ বছর আগে রাষ্ট্র যাকে বানিয়েছিল নগরবধূ বা পতিতা-
স্বাদের দিক থেকে অনেকের কাছেই ‘আম্রপালী’ আম খুবই প্রিয় । আকারে ছোট কিন্তু মিষ্টির দিক থেকে যেন সকল আমকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘আম্রপালী’ । কিন্তু এই আমটার নামকরণ কোথা থেকে হল জানেন ?
আম্রপালী জন্মেছিলেন আজ থেকে ২,৫০০ বছর আগে ভারতে । তিনি ছিলেন সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী এবং নর্তকী । তার রুপে পাগল ছিল পুরো পৃথিবী আর এই রুপই তার জন্য কাল হয়ে ওঠে । যার কারণে তিনি ছিলেন ইতিহাসের এমন একজন নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় আদেশে পতিতা বানানো হয়েছিল !
আম্রপালী বাস করতেন বৈশালী শহরে । বৈশালী ছিল প্রাচীন ভারতের গণতান্ত্রিক একটি শহর, যেটি বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের অর্ন্তগত ।
মাহানামন নামে এক ব্যক্তি শিশুকালে আম্রপালীকে আম গাছের নিচে খুঁজে পান । তার আসল বাবা-মা কে ইতিহাস ঘেঁটেও তা জানা যায়নি । যেহেতু তাকে আম গাছের নিচে পাওয়া যায় তাই তার নাম রাখা হয় আম্রপালী । সংস্কৃতে আম্র মানে আম এবং পল্লব হল পাতা । অর্থাৎ, আমগাছের নবীন পাতা ।
কিন্তু শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই আম্রপালীকে নিয়ে হইচই পড়ে যায় । তার রুপে চারপাশের সব মানুষ পাগল হয়ে যান । দেশ-বিদেশের রাজপুত্রসহ রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যান । সবাই তাকে একনজর দেখতে চান, বিয়ে করতে চান । এ নিয়ে আম্রপালীর মা-বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন । তারা তখন বৈশালীতে সকল গণমান্য ব্যক্তিকে এর একটি সমাধান করার জন্য বলেন । কারণ, সবাই আম্রপালীকে বিয়ে করতে চান । তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ও ধনবান ব্যক্তি মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত নেন তা হল, আম্রপালীকে কেউ বিয়ে করতে পারবেন না । কারণ তার রুপ । সে একা কারো হতে পারে না । আম্রপালী হবে সবার । সে হবে একজন নগরবধু, মানে সোজা বাংলায় পতিতা ।
এটা ছিল একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত । ইতিহাসে এভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কাউকে পতিতা বানানো হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত খুবই বিরল ! আম্রপালী সে সভায় পাঁচটি শর্ত রাখেন-
(১) নগরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় তার ঘর হবে ।
(২) তার মুল্য হবে প্রতি রাত্রির জন্য পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা ।
(৩) একবারে মাত্র একজন তার গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন ।
(৪ ) শক্র বা কোন অপরাধীর সন্ধানে প্রয়োজনে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে ।
(৫) তার গৃহে কে এলেন আর কে গেলেন- এ নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা যাবে না ।
সবাই তার এসব শর্ত মেনে নেন।
প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন বিম্বিসার । শোনা যায়, তার স্ত্রীর সংখ্যা নাকি ৫০০ ছিল ! নর্তকীদের নাচের এক অনুষ্ঠানে তিনি এক নর্তকীর নাচ দেখে বলেছিলেন, এ নর্তকী বিশ্বসেরা ।
তখন তার একজন সভাসদ বলেন- মহারাজ, এই নর্তকী আম্রপালীর নখের যোগ্য নয় !
বিম্বিসারের এই কথাটি নজর এড়ায়নি । তিনি তার সেই সভাসদের থেকে আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে কাছে পাবার বাসনা করেন ।
কিন্তু তার সভাসদ বলেন, সেটা সম্ভব নয় । কারণ, তাহলে আমাদের যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে আর আম্রপালীর দেখা পাওয়াও এত সহজ নয় । দেশ-বিদেশের বহু রাজাসহ রাজপুত্ররা আম্রপালীর প্রাসাদের সামনে তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন । কিন্তু মন না চাইলে তিনি কাউকে দেখা দেন না ।
এত কথা শুনে বিম্বিসারের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল । তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালীকে দেখে আসবেন । কি এমন আছে সেই নারীর মাঝে, যার জন্য পুরো পৃথিবী পাগল হয়ে আছে !
তারপর বহু চড়াই উৎরাই শেষে তার আম্রপালীর সাথে দেখা করার সুযোগ আসে। কিন্তু দেখা করতে গিয়ে রাজা চমকে উঠেন, এত কোন নারী নয় ; যেন সাক্ষাৎ পরী !
কিন্তু অবাক রাজার জন্য আরও অবাক কিছু অপেক্ষা করছিল । কারণ, আম্রপালী প্রথম দেখাতেই তাকে মগধ রাজ্যের রাজা বলে চিনে ফেলেন এবং জানান- তিনি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন বহু আগে থেকেই ।
এই কথা শুনে রাজা সাথে সাথে তাকে তার রাজ্যের রাজরাণী বানানোর প্রস্তাব দেন । কিন্তু আম্রপালী জানান, তার রাজ্যের মানুষ এটা কখনোই মেনে নেবেন না । উল্টো বহু মানুষের জীবন যাবে । রক্তপাত হবে । তাই রাজাকে দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে বলেন ।
কিন্তু বিম্বিসার বৈশালী আক্রমন করে আম্রপালীকে পেতে চান । ওদিকে আম্রপালী তার নিজের রাজ্যের কোন ক্ষতি চান না । তাই তিনি রাজাকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান এবং বৈশালীতে কোন আক্রমণ হলে তিনি তা মেনে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন ।
এদিকে বিম্বিসারের সন্তান অজাতশত্রুও আম্রপালীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন । তিনি বিম্বিসারকে আটক করে নিজে সিংহাসন দখল করে বসেন এবং আম্রপালীকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করে বসেন । কিন্তু দখল করতে সক্ষম হননি এবং খুব বাজেভাবে আহত হন । সেদিনও আম্রপালী অজাতশত্রুর বিয়ের প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন ।
এত নাটকীয়তার পর শেষের দিকে এসে কি হল ? গৌতম বুদ্ধর সময়কাল তখন । গৌতম বুদ্ধ তার কয়েকশ সঙ্গী নিয়ে বৈশালী রাজ্যে এলেন । একদিন বৈশালী রাজ্যের রাবান্দা থেকে এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আম্রপালীর মনে ধরে গেল । তিনি সেই সন্ন্যাসীকে চার মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন । সবাই ভাবলেন, বুদ্ধ কখনই রাজি হবেন না । কারণ, একজন সন্ন্যাসী এমন একজন পতিতার কাছে থাকবেন ; এটা হতেই পারে না । কিন্তু গৌতম বুদ্ধ তাকে রাখতে রাজি হলেন এবং এটাও বললেন, আমি শ্রমণের (তরুণ সে সন্ন্যাসীর নাম ছিল) চোখে কোন কামনা-বাসনা দেখছি না । সে চার মাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে- এটা আমি নিশ্চিত !
চার মাস শেষ হল । গৌতম বুদ্ধ তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে যাবেন । তরুণ শ্রমণের কোন খবর নেই । তবে কি আম্রপালীর রুপের কাছেই হেরে গেলেন শ্রমণ ? সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন । তার পিছনে পিছনে আসেন একজন নারী । সেই নারীই ছিলেন আম্রপালী । আম্রপালী তখন বুদ্ধকে বলেন, তরুণ শ্রমণকে প্রলুব্ধ করতে কোনও চেষ্টা বাকি রাখেননি তিনি । কিন্তু এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালী । তাই আজ সর্বস্ব ত্যাগ করে বুদ্ধের চরণে আশ্রয় চান তিনি ।
পরে সব কিছু দান করে বাকী জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালী আর এই আম্রপালী নামেই ১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা ‘দশোহরি’ ও ‘নিলাম’- এই দু’টি আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে এক নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেন এবং নাম রাখেন ‘আম্রপালী’।
আন্তর্জাতিক
ফিলিস্তিন ইসরায়েল সংঘাতের শুরু কিভাবে?

ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে লড়াই এখন যেরকম তীব্র হয়ে উঠেছে তা একটি “পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে” রূপ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ।
সর্বশেষ এই সহিংসতা শুরু হয়েছে জেরুজালেমে এক মাস ধরে চলতে থাকা তীব্র উত্তেজনার পর। কিন্তু ইসরায়েলি আর ফিলিস্তিনিদের এই দীর্ঘ সংঘাতের পেছনের ইতিহাস আসলে কী?চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা যাক:
চলুন ফিরে যায় একশ বছর পূর্বে
মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন নামের যে এলাকা, সেটি ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের পর ব্রিটেন ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
তখন ফিলিস্তিনে যারা থাকতো তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আরব, সেই সঙ্গে কিছু ইহুদী, যারা ছিল সংখ্যালঘু।
কিন্তু এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করলো যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রিটেনকে দায়িত্ব দিল ইহুদী জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।
ইহুদীরা এই অঞ্চলকে তাদের পূর্বপুরুষদের দেশ বলে দাবি করে। কিন্তু আরবরাও দাবি করে এই ভূমি তাদের এবং ইহুদীদের জন্য সেখানে রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টার তারা বিরোধিতা করে।
উনিশশো বিশ থেকে ১৯৪০ দশকের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করে এবং তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ইউরোপে ইহুদী নিপীড়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর ইহুদী নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে এরা নতুন এক মাতৃভূমি তৈরির স্বপ্ন দেখছিল।
ফিলিস্তিনে তখন ইহুদী আর আরবদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হলো, একই সঙ্গে সহিংসতা বাড়ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও।
উনিশশো সাতচল্লিশ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরো করে দুটি পৃথক ইহুদী এবং আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলো। জেরুজালেম থাকবে একটি আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে। ইহুদী নেতারা এই প্রস্তাব মেনে নেন, কিন্তু আরব নেতারা প্রত্যাখ্যান করেন। জাতিসংঘের এই পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।
ব্রিটিশরা এই সমস্যার কোন সমাধান করতে ব্যর্থ হয়ে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে। ইহুদী নেতারা এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
বহু ফিলিস্তিনি এর প্রতিবাদ জানান এবং এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সৈন্যরাও যেখানে যায় যুদ্ধ করতে।
হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তখন হয় তাদের ঘরবাড়ি ফেলে পালাতে হয় অথবা চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে ‘আল নাকবা’ বা ‘মহা-বিপর্যয়’ বলে থাকে।
পরের বছর এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যখন যুদ্ধ শেষ হলো , ততদিনে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। জর্ডান দখল করেছিল একটি অঞ্চল, যেটি এখন পশ্চিম তীর বলে পরিচিত। আর মিশর দখল করেছিল গাযা।
জেরুজালেম নগরী ভাগ হয়ে যায়, ইসরায়েলি বাহিনী দখল করে নগরীর পশ্চিম অংশ, আর জর্ডানের বাহিনী পূর্ব অংশ।
দু’পক্ষের মধ্যে যেহেতু কখনোই কোন শান্তি চুক্তি হয়নি, তাই উভয় পক্ষই অপর পক্ষকে দোষারোপ করতে থাকে। দুই পক্ষের মধ্যে পরের দশকগুলোতে এরপর আরও বহু যুদ্ধ হয়েছে।
উনিশশো সাতষট্টি সালে আরেকটি যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, গাযা, এবং মিশরের সিনাই অঞ্চল দখল করে নেয়।
বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি শরণার্থী থাকে গাযা এবং পশ্চিম তীরে। প্রতিবেশী জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননেও আছে অনেক ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েল এই ফিলিস্তিনি এবং তাদের বংশধরদের কাউকেই আর তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়নি। ইসরায়েল বলে থাকে, এদের ফিরতে দিলে সেই চাপ ইসরায়েল নিতে পারবে না এবং ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
ইসরায়েল এখনো পশ্চিম তীর দখল করে আছে। গাযা থেকে তারা যদিও সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে, জাতিসংঘের দৃষ্টিতে এটি এখনো ইসরায়েলের দখলে থাকা একটি এলাকা।
ইসরায়েল এখন পুরো জেরুজালেম নগরীকেই তাদের রাজধানী বলে দাবি করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়। পুরো জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্রসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ।
গত ৫০ বছর ধরে ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদী বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে। ছয় লাখের বেশি ইহুদী এখন এসব এলাকায় থাকে।
ফিলিস্তিনিরা বলছে, আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো অবৈধ বসতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়। তবে ইসরায়েল তা মনে করে না।
পূর্ব জেরুজালেম, গাযা এবং পশ্চিম তীরে যে ফিলিস্তিনিরা থাকেন, তাদের সঙ্গে ইসরায়েলিদের উত্তেজনা প্রায়শই চরমে উঠে।
গাযা শাসন করে কট্টরপন্থী ফিলিস্তিনি দল হামাস। ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের অনেকবার যুদ্ধ হয়েছে। গাযার সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল এবং মিশর, যাতে হামাসের কাছে কোন অস্ত্র পৌঁছাতে না পারে।
গাযা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা বলছে, ইসরায়েলের নানা পদক্ষেপ এবং কঠোর বিধিনিষেধের কারণে তারা খুবই দুর্দশার মধ্যে আছে। অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করে যে, ফিলিস্তিনিদের সহিংসতা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য তাদের এই কাজ করতে হয়।
এবছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি রমজানের শুরু থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তখন প্রায় প্রতি রাতেই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল।
পূর্ব জেরুজালেম হতে কিছু ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি ফিলিস্তিনিদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
মূল সমস্যাগুলো কী?
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিরা বেশ কিছু ইস্যুতে মোটেই একমত হতে পারছে না।
এর মধ্যে আছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ব্যাপারে কী হবে; পশ্চিম তীরে যেসব ইহুদী বসতি স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো থাকবে, নাকি সরিয়ে নেয়া হবে; জেরুজালেম নগরী কি উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি হবে; আর সবচেয়ে জটিল ইস্যু হচ্ছে- ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্ন।
গত ২৫ বছর ধরেই শান্তি আলোচনা চলছে থেমে থেমে। কিন্তু সংঘাতের কোন সমাধান এখনো মেলেনি।
এক কথায় বলতে গেলে, খুব সহসা এই পরিস্থিতির কোন সমাধান মিলবে না।
সংকট সমাধানের সর্ব-সাম্প্রতিক উদ্যোগটি নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে নাকচ করে দিয়েছিল একেবারেই একতরফা একটি উদ্যোগ বলে। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ নিয়ে আসলে কাজ মোটেই এগোয়নি।
ভবিষ্যতের যে কোন শান্তি চুক্তির আগে দুপক্ষকে জটিল সব সমস্যার সমাধানে একমত হতে হবে।
সেটি যতদিন না হচ্ছে, দুপক্ষের এই সংঘাত চলতেই থাকবে।
আন্তর্জাতিক
জার্মানিতে নাৎসিবাদ ও হিটলারের উত্থান

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের প্রেক্ষাপট দেশটির ইতিহাসের এক অরুণ অধ্যায়। যুদ্ধের বিজয়ী পক্ষের চাপিয়ে দেয়া অন্যায় ও অন্যায্য চুক্তিসমূহ দেশটির অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ভার্সাই চুক্তির ফলে আবির্ভূত হওয়া ভাইমার প্রজাতন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষার মুখে পড়ে। পুরো জার্মান সমাজ এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পতিত হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্য ঘাটতি, বেকার সমস্যা, বাণিজ্য মন্দা, জনসংখ্যা সমস্যা, দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান সমস্যা জার্মান জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। জনগণের মনে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার কালো মেঘ ঘনীভূত হতে থাকে যা তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিশোধের আগুনকে জাগিয়ে তোলে। ফলশ্রুতিতে ইতালির ফ্যাসিস্টদের আদলে জার্মানিতে নাৎসি নামে এক উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে।
National sozialismus অর্থাৎ জার্মানির জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল যা পৃথিবীব্যাপী নাৎসিবাদী(Nazism) বা নাৎসি পার্টি নামে সমধিক পরিচিত। এটি একটি উগ্ৰ ডানপন্থী জার্মান জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক মতাদর্শ যা ইতালির ফ্যাসিবাদের সমপর্যায়ের রাজনৈতিক দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। নাৎসিবাদের মধ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কৌলিবাদ ( Scientific Racism), ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব ( Anti Semitism), ও সাম্যবাদ ( Communism) বিরোধী অগণতান্ত্রিক চেতনা। আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে গেলে নাৎসিবাদ হলো জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা ও আদর্শের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি যার মূলমন্ত্র জার্মানির জাতীয় সমাজতান্ত্রিক পার্টির প্রতিষ্ঠার সাথে নিহত রয়েছে।
বিসমার্কের শাসনামলে জার্মানি পুরো পৃথিবী জুড়ে যে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। জার্মান রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে যে ভাইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অচিরেই প্রশ্নবিদ্ধ হয় পর্যাপ্ত রাজনৈতিক সমর্থনের অভাবে। প্রজাতন্ত্রের দুর্বলতার সুযোগে জার্মানিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করে, প্রজাতন্ত্র বিরোধীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আঁতাত পাকাপোক্ত হতে থাকে, অর্থনৈতিক মন্দাসহ অন্যান্য কারণে তৎকালীন ভাইমার প্রজাতন্ত্রের নেতা ফ্রেডরিক এর্বাটের প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে, সরকারের পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে বিদ্যমান সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, জনগণের অনুভূতিকে কাজে লাগাতে এডলফ হিটলার তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি জার্মানিকে তার হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধার করে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও শ্রেষ্ঠতম জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন যা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তিনি খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও জাতীর স্বপ্নদ্রষ্টার আসনে অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হন। হিটলার ও নাৎসি দল একে অপরের পরিপূরক হিসেবে জার্মানির সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
হিটলারের নেতৃত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত নাৎসি পার্টি সেসকল নীতিমালার অনুসরণ করত তা কিন্তু নব উদ্ভাবিত কোন মতবাদ ছিল না। উদারতাবাদ, যুক্তিবাদ এবং মার্ক্সবাদ বিরোধী মতাদর্শের বিপরীতে জার্মান আর্য রক্ত, জার্মান ভাষা ও সকল ধর্মীয় বিশ্বাসমুক্ত উগ্ৰ জাতীয়তাবাদী চেতনাই ছিল নাৎসি পার্টির ভৌতভিত্তি। নাৎসি পার্টির মূল প্রতিপাদ্য ছিল- আর্য রক্তের ধারক জার্মানরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি এবং পৃথিবীর নেতৃত্ব লাভের অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে।
২৯২০ এডলফ হিটলার নাৎসি পার্টির জন্য পঁচিশ দফা সম্বলিত এক ইশতেহার জারি করেন যা তৎকালীন জার্মানির জনমনে ব্যাপক আশার সঞ্চার করে। আশাহত জার্মান সমাজের কাছে হিটলার একমাত্র ত্রাতা হিসেবে অভিহিত হন। জার্মানির যুবসমাজ হিটলারের নাৎসি পার্টির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং দিনে দিনে হিটলারের প্রভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। তিনি ১৯৩৩ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার নাম পৃথিবীর ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পরিনত হয়।
লেখক- আকতারুল ইসলাম
-
বিনোদন2 years ago
৫০ হাজার সিনেমা ডাউনলোড হবে মাত্র এক সেকেন্ডেই!
-
ইতিহাস2 years ago
রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা
-
আন্তর্জাতিক2 years ago
বিশ্বজুড়ে বিয়ের যত আজব অদ্ভুত রীতিনীতি
-
খেলাধুলা2 years ago
প্রথম জয়ের স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি2 years ago
মোবাইল ফোন আসল না নকল বুঝবেন যেভাবে
-
জাতীয়2 years ago
‘পরীক্ষা এক বছর না দিলে শিক্ষার্থীদের জীবনে এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না’
-
সর্বশেষ2 years ago
আনারসের পাতা থেকে তৈরী হচ্ছে ড্রোন
-
আন্তর্জাতিক2 years ago
দ্য চেঞ্জ মেকার : এরদোয়ান