সাহিত্য
এই শহরে এতো প্রেমিক সবাই তো রুপের পাগল (সোহানুর রহমান সোহান )
এই শহরে কিছু প্রেম সূচনায় পতন
এই শহরে কিছু প্রেম পায় যতন।
এই শহরে কত সম্পর্ক নিবিড়
এই শহরে কত সম্পর্কে ঘুণের ভিড়।
এই শহরে কিছু প্রেম দেহের টানে..
এই শহরে কিছু প্রেম খুঁজে পায় মানে।
এই শহরে কিছু প্রেমিক রুপের পাগল..
এই শহরে কেউ আবল তাবল।
এই শহরে কেউ বিরহে মাতাল
এই শহরে কেউ অজস্র প্রেমে বেসামাল।
এই শহরে সুন্দরী নারীর অনেক ঢেউ
এই শহরে সুন্দরী নারী দেখে পাগল হচ্ছে কেউ।।
শিক্ষাঙ্গন
এই গ্রামে (সোহানুর রহমান সোহান)

এই গ্রামে মানুষ দেখি আর অবাক হই
যাদের ভাবতাম ভালো তারা আজ কালো..
এই গ্রামে মানুষ দেখেছি এখন দেখি মুখোশ
প্রতি মূহুর্তে উন্মোচন হচ্ছে তাদেরি নগ্ন খোলস!
এই গ্রামে যাদের ভাবা হয় জীবন গড়ার কারিগর
তারাই আজ কে করছে সমাজকে নীচুতর।
এই গ্রামে কিছু মানুষ সমালোচনা করে যাচ্ছে
কারো ভালো দেখলে তারা, তার পেছনে লাগছে।
এই গ্রামে তারা মিথ্যা বলে যাচ্ছে
সমাজে মানুষের ভেতরে বিভ্রান্ত ছড়াছে।
এই গ্রামে তারা যাচ্ছে গিবত করে
নামাছে নিজে কে ব্যাক্তিত্বহীনদের কাতারে।
এই গ্রামে মানুষ না জেনে মন্তব্য করে চলেছে
না জেনে মন্তব্য করাটা কতটা খারাপ তা কি সে ভুলেছে?
ছলপাতা এই গ্রামে মানুষ খুবই খারাপ
রাত থেকে দিন করে চলেছে অনর্থক আলাপ।
ইতিহাস
কে ছিলেন আম্রপালী?

বর্তমানে আম্রপালী আম আমাদের সবার প্রিয়। কিন্তু ইতিহাসেও একজন আম্রপালি ছিলেন। চলুন আজ ইতিহাসের আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক :
আম্রপালী ছিলেন এমন একজন অনিন্দ্য সুন্দরী ; প্রায় ২,৫০০ বছর আগে রাষ্ট্র যাকে বানিয়েছিল নগরবধূ বা পতিতা-
স্বাদের দিক থেকে অনেকের কাছেই ‘আম্রপালী’ আম খুবই প্রিয় । আকারে ছোট কিন্তু মিষ্টির দিক থেকে যেন সকল আমকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘আম্রপালী’ । কিন্তু এই আমটার নামকরণ কোথা থেকে হল জানেন ?
আম্রপালী জন্মেছিলেন আজ থেকে ২,৫০০ বছর আগে ভারতে । তিনি ছিলেন সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী এবং নর্তকী । তার রুপে পাগল ছিল পুরো পৃথিবী আর এই রুপই তার জন্য কাল হয়ে ওঠে । যার কারণে তিনি ছিলেন ইতিহাসের এমন একজন নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় আদেশে পতিতা বানানো হয়েছিল !
আম্রপালী বাস করতেন বৈশালী শহরে । বৈশালী ছিল প্রাচীন ভারতের গণতান্ত্রিক একটি শহর, যেটি বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের অর্ন্তগত ।
মাহানামন নামে এক ব্যক্তি শিশুকালে আম্রপালীকে আম গাছের নিচে খুঁজে পান । তার আসল বাবা-মা কে ইতিহাস ঘেঁটেও তা জানা যায়নি । যেহেতু তাকে আম গাছের নিচে পাওয়া যায় তাই তার নাম রাখা হয় আম্রপালী । সংস্কৃতে আম্র মানে আম এবং পল্লব হল পাতা । অর্থাৎ, আমগাছের নবীন পাতা ।
কিন্তু শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই আম্রপালীকে নিয়ে হইচই পড়ে যায় । তার রুপে চারপাশের সব মানুষ পাগল হয়ে যান । দেশ-বিদেশের রাজপুত্রসহ রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যান । সবাই তাকে একনজর দেখতে চান, বিয়ে করতে চান । এ নিয়ে আম্রপালীর মা-বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন । তারা তখন বৈশালীতে সকল গণমান্য ব্যক্তিকে এর একটি সমাধান করার জন্য বলেন । কারণ, সবাই আম্রপালীকে বিয়ে করতে চান । তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ও ধনবান ব্যক্তি মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত নেন তা হল, আম্রপালীকে কেউ বিয়ে করতে পারবেন না । কারণ তার রুপ । সে একা কারো হতে পারে না । আম্রপালী হবে সবার । সে হবে একজন নগরবধু, মানে সোজা বাংলায় পতিতা ।
এটা ছিল একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত । ইতিহাসে এভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কাউকে পতিতা বানানো হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত খুবই বিরল ! আম্রপালী সে সভায় পাঁচটি শর্ত রাখেন-
(১) নগরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় তার ঘর হবে ।
(২) তার মুল্য হবে প্রতি রাত্রির জন্য পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা ।
(৩) একবারে মাত্র একজন তার গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন ।
(৪ ) শক্র বা কোন অপরাধীর সন্ধানে প্রয়োজনে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে ।
(৫) তার গৃহে কে এলেন আর কে গেলেন- এ নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা যাবে না ।
সবাই তার এসব শর্ত মেনে নেন।
প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন বিম্বিসার । শোনা যায়, তার স্ত্রীর সংখ্যা নাকি ৫০০ ছিল ! নর্তকীদের নাচের এক অনুষ্ঠানে তিনি এক নর্তকীর নাচ দেখে বলেছিলেন, এ নর্তকী বিশ্বসেরা ।
তখন তার একজন সভাসদ বলেন- মহারাজ, এই নর্তকী আম্রপালীর নখের যোগ্য নয় !
বিম্বিসারের এই কথাটি নজর এড়ায়নি । তিনি তার সেই সভাসদের থেকে আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে কাছে পাবার বাসনা করেন ।
কিন্তু তার সভাসদ বলেন, সেটা সম্ভব নয় । কারণ, তাহলে আমাদের যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে আর আম্রপালীর দেখা পাওয়াও এত সহজ নয় । দেশ-বিদেশের বহু রাজাসহ রাজপুত্ররা আম্রপালীর প্রাসাদের সামনে তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন । কিন্তু মন না চাইলে তিনি কাউকে দেখা দেন না ।
এত কথা শুনে বিম্বিসারের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল । তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালীকে দেখে আসবেন । কি এমন আছে সেই নারীর মাঝে, যার জন্য পুরো পৃথিবী পাগল হয়ে আছে !
তারপর বহু চড়াই উৎরাই শেষে তার আম্রপালীর সাথে দেখা করার সুযোগ আসে। কিন্তু দেখা করতে গিয়ে রাজা চমকে উঠেন, এত কোন নারী নয় ; যেন সাক্ষাৎ পরী !
কিন্তু অবাক রাজার জন্য আরও অবাক কিছু অপেক্ষা করছিল । কারণ, আম্রপালী প্রথম দেখাতেই তাকে মগধ রাজ্যের রাজা বলে চিনে ফেলেন এবং জানান- তিনি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন বহু আগে থেকেই ।
এই কথা শুনে রাজা সাথে সাথে তাকে তার রাজ্যের রাজরাণী বানানোর প্রস্তাব দেন । কিন্তু আম্রপালী জানান, তার রাজ্যের মানুষ এটা কখনোই মেনে নেবেন না । উল্টো বহু মানুষের জীবন যাবে । রক্তপাত হবে । তাই রাজাকে দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে বলেন ।
কিন্তু বিম্বিসার বৈশালী আক্রমন করে আম্রপালীকে পেতে চান । ওদিকে আম্রপালী তার নিজের রাজ্যের কোন ক্ষতি চান না । তাই তিনি রাজাকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান এবং বৈশালীতে কোন আক্রমণ হলে তিনি তা মেনে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন ।
এদিকে বিম্বিসারের সন্তান অজাতশত্রুও আম্রপালীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন । তিনি বিম্বিসারকে আটক করে নিজে সিংহাসন দখল করে বসেন এবং আম্রপালীকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করে বসেন । কিন্তু দখল করতে সক্ষম হননি এবং খুব বাজেভাবে আহত হন । সেদিনও আম্রপালী অজাতশত্রুর বিয়ের প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন ।
এত নাটকীয়তার পর শেষের দিকে এসে কি হল ? গৌতম বুদ্ধর সময়কাল তখন । গৌতম বুদ্ধ তার কয়েকশ সঙ্গী নিয়ে বৈশালী রাজ্যে এলেন । একদিন বৈশালী রাজ্যের রাবান্দা থেকে এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আম্রপালীর মনে ধরে গেল । তিনি সেই সন্ন্যাসীকে চার মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন । সবাই ভাবলেন, বুদ্ধ কখনই রাজি হবেন না । কারণ, একজন সন্ন্যাসী এমন একজন পতিতার কাছে থাকবেন ; এটা হতেই পারে না । কিন্তু গৌতম বুদ্ধ তাকে রাখতে রাজি হলেন এবং এটাও বললেন, আমি শ্রমণের (তরুণ সে সন্ন্যাসীর নাম ছিল) চোখে কোন কামনা-বাসনা দেখছি না । সে চার মাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে- এটা আমি নিশ্চিত !
চার মাস শেষ হল । গৌতম বুদ্ধ তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে যাবেন । তরুণ শ্রমণের কোন খবর নেই । তবে কি আম্রপালীর রুপের কাছেই হেরে গেলেন শ্রমণ ? সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন । তার পিছনে পিছনে আসেন একজন নারী । সেই নারীই ছিলেন আম্রপালী । আম্রপালী তখন বুদ্ধকে বলেন, তরুণ শ্রমণকে প্রলুব্ধ করতে কোনও চেষ্টা বাকি রাখেননি তিনি । কিন্তু এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালী । তাই আজ সর্বস্ব ত্যাগ করে বুদ্ধের চরণে আশ্রয় চান তিনি ।
পরে সব কিছু দান করে বাকী জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালী আর এই আম্রপালী নামেই ১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা ‘দশোহরি’ ও ‘নিলাম’- এই দু’টি আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে এক নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেন এবং নাম রাখেন ‘আম্রপালী’।
সাহিত্য
বন্ধুর মাতৃ বিয়োগ (ছোট গল্প)

আমার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ছিল যার সাথে আমার একটু বেশিই মাখামাখি পর্যায়ের সম্পর্ক ছিল। এই মাখামাখিটা যতটা না আমার ইচ্ছায় তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল তার ইচ্ছা। সে এমন কোন বিষয় নাই যা আমার সাথে শেয়ার করতে সংকোচ বোধ করতো। তবে আমি তাকে আমার আর আট দশটা বন্ধুর মতো করেই দেখতাম এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি বলার ক্ষেত্রে নিজের সেন্সর বোর্ডে পাস করিয়ে যতোটুকু বলা নিরাপদ ততোটুকুই শেয়ার করতাম। তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা আমার জন্য যতটা না স্বতঃস্ফূর্ত তার চেয়ে বেশিই চাপিয়ে দেয়া ধরনের। সে একপ্রকার আগবাড়িয়ে বন্ধুদের দাবি নিয়ে হাজির হতো এবং আমার কাছে যতটুকু সুবিধা আদায় করা যায় তা কড়ায় গন্ডাই আদায় করে নিত। তার প্রতি যে আমার কোন খারাপ লাগা কাজ করতো ব্যাপারটা মোটেও তেমনটা নয় তবে তাকে আপাদমস্তক একজন সুহৃদ বন্ধু ভাবতে আমার ভেতরে কুণ্ঠাবোধ কাজ করতো। এই কুণ্ঠাবোধ আজ অবধি মনের মধ্যে স্বমহিমায় বিদ্যমান রয়েছে। এখন তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই। বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে বন্ধুত্বে ফাটল না ধরলেও তা আর কোন পর্যায়েই মাখামাখির জায়গায় নেই। তবে তার সাথে জুড়ে থাকা কিছু অদ্ভুত মজার স্মৃতি আজও সগৌরবে মনের এক কোনায় ঠাই করে আছে। সেইসব অদ্ভুত মজার ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে যে ঘটনাটি আমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি করেছে তা আজকে পাঠকদের নিকট শেয়ার করতে চাই।
সালটা ছিল ২০১৮। সেপ্টেম্বর মাসের আট বা দশ তারিখ হবে। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার বন্ধুটির মা সেইদিন পরলোকগমন করলেন। সংবাদটি খুবই বেদনাদায়ক ছিল আমার জন্য কারণ আমরা সাথে আন্টির বেশ কয়েকবার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি এতটাই মমতাময়ী ও সুহৃদয়া ছিলেন যে তার আন্তরিকতা পূর্ণ ব্যবহার যে কোনো মানুষের মনে শ্রদ্ধার উদ্রেক করবে। আমি তাকে নিজ মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করতাম। এবং তিনিও আমাকে নিজ সন্তানের মতোই মমত্বের সাথে এক মায়াময় বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন এক মরনব্যাধির সাথে যুদ্ধ করে সেইদিনটায় পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। সকাল দশটার দিকে আমি আমার সেই বন্ধুটির বাসায় গেলাম। তারর এমন দুর্দিনে পাশে থেকে দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার নিমিত্তে । মা হারানোর বেদনা তার আগেই আমাকে উপলব্ধি করতে হয়েছে। আমি ভালো করেই জানি এটা কতটা কষ্টদায়ক অনুভূতি। যাইহোক আমি বন্ধুর বাসায় পৌঁছেই গন রোনাজারির আওয়াজ শুনে মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠলো। নিজের অজান্তেই চোঁখের এক কোনায় অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সবাই কান্নার অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই। তবে হয়তো আমার সেই বন্ধুটির কান্না সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। অত্যান্ত জোর গলায় চিৎকার করে বলছিল, ও মা গে, আমার মা। তুই ছাড়া আমি ক্যামনে থাকব গে মা। ও আল্লাহ আমাকে আমার মার সাথে তুলে নাও……’। এভাবে কান্না করে পুরো বাড়িকে কাঁপিয়ে তুললো। এক পর্যায়ে সবাই কান্না থামিয়ে ওকে সান্ত্বনা দেয়া শুরু করল। কিন্তু সান্ত্বনা তাকে দেয়া গেল না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারালো। ওর বড় বোন, ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে হাওমাও করে কান্না শুরু করে দিল। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়লাম। এমন করুণ দৃশ্য এর আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে করতে পারছিলাম না। এভাবে প্রায় এক ঘন্টা সময় পার হয়ে গেছে। আমার বন্ধু জ্ঞান ফিরে পেল। আমি ওর কাছে গেলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে আবারো কান্না শুরু করে দিল। অনেক কষ্টে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনলাম। দুপুর সোয়া বারোটায় জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। বন্ধুর মাকে চিরবিদায় জানিয়ে ফিরে আসলাম। বাসায় এসে নতুন করে কান্নার আসর জমে উঠলো। আমার বন্ধু, তার বাপ ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন একসাথে কান্নার ম্যারাথনে নেমে পড়েছেন। কান্নার এক পর্যায়ে আমার বন্ধুটি আবারো জ্ঞান হারালো। মা হারানোর বেদনা হয়তো তার জন্য পৃথিবী সম ভারি হয়ে উঠেছে। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আবারো তার জ্ঞান ফেরানো গেলো। উঠে বসে মার জন্য চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। কান্নার শব্দে আকাশ বাতাস ভারী করে তুললো। ততক্ষণে প্রায় দুটো বেজে গেছে। আমাকে বিদায় নিতে হবে। হালকা খাবার খেয়ে সবার সাথে দেখা করে বিদায় নিলাম। আমার বন্ধুটি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তবে এবার তাকে খুব স্বাভাবিক মনে হলো। আসবার সময় কিছুপথ দুজন একসাথে আসলাম। ওদের বাসা থেকে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে মোড়।অটোরিকশা কিংবা সিএনজি ধরে রাজশাহী শহরে ফিরতে হবে। আমার বন্ধুটি মোড়ে আসবার পথে গল্প শুরু করে দিল। হলিউডে ও বলিউডের নতুন সিনেমা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চললো। তারপর তার নতুন প্রেম নিয়ে কথা। আমার বন্ধুটি একসাথে অনেকগুলো প্রেম করতো। নতুন সম্পর্ক তৈরি করা ও ব্রেক আপ করা ওর কাছে ডালভাতের মতো ব্যাপার। খুব সম্প্রতি সে নওগাঁ সরকারি কলেজের এক ছাত্রীর সাথে প্রেম শুরু করেছে। ফেইসবুকে সম্পর্ক শুরু। এক মাসের মধ্যে তিনবার ডেটিং পর্যন্ত করে ফেলেছে। ও বলতে থাকলো। আমি বিস্মিত হয়ে ওর কথা শুনছিলাম। ওর এসব কথাগুলো কি আজকে না বললে হতো না? যে ছেলে কিছুক্ষণ আগেই মাতৃশোকে তীব্র আর্তনাদ করছিল, আল্লাহর কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করছিলো,সে এতো তাড়াতাড়ি শোক কাটিয়ে উঠতে পারে কিভাবে! ওর রং তামাশার কথা শুনে মনে হচ্ছিল না যে সেদিন ওর মা চিরবিদায় নিয়েছেন। যাইহোক আমি ওকে বিদায় জানিয়ে একটা সিএনজি তে উঠে পড়লাম। যাত্রাপথে আমার বন্ধুটির কথা বারবার মনে হচ্ছিল। ও প্রথমে যতটা শোকাহত ছিল পরে ততো বেশি ফুর্তিতে ছিল। হয়তো কিছু মানুষের শোক যত বেশি তার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ তার চেয়েও ঢের বেশি। যত বেশি রোনাজারি ,দুঃখবোধ ততোই কম ও স্বল্পস্থায়ী।
আকতারুল ইসলাম
-
বিনোদন2 years ago
৫০ হাজার সিনেমা ডাউনলোড হবে মাত্র এক সেকেন্ডেই!
-
ইতিহাস2 years ago
রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা
-
আন্তর্জাতিক2 years ago
বিশ্বজুড়ে বিয়ের যত আজব অদ্ভুত রীতিনীতি
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি2 years ago
মোবাইল ফোন আসল না নকল বুঝবেন যেভাবে
-
খেলাধুলা2 years ago
প্রথম জয়ের স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা
-
জাতীয়2 years ago
‘পরীক্ষা এক বছর না দিলে শিক্ষার্থীদের জীবনে এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না’
-
সর্বশেষ2 years ago
আনারসের পাতা থেকে তৈরী হচ্ছে ড্রোন
-
আন্তর্জাতিক2 years ago
দ্য চেঞ্জ মেকার : এরদোয়ান